ঢাকা , বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫ , ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
চালকের সহকারীও গ্রেফতার মারা গেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদ পাবে বিরোধী দলÑ সালাহউদ্দিন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের সম্পদ উদ্ধারে চার দেশে এমএলএআর মাদককাণ্ডে অস্থির খুলনা খুলনায় দু’জনের শরীরে করোনা শনাক্ত চট্টগ্রামে আরও ১০ জন করোনায় আক্রান্ত অবহেলা-উত্তেজনায় ঝরণায় ঝরছে পর্যটকের প্রাণ দখলে বেহাল ছাউনি যাত্রীদের দুর্ভোগ ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ২৪৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি কুমিল্লায় ডেঙ্গুতে ৩ মৃত্যু, দুই ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্বের সঙ্গে আরও বাড়তে পারে দারিদ্র্য-বৈষম্য সড়ক দুর্ঘটনায় ইবি শিক্ষার্থী নিহত পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় সরকারি চাল জব্দ গাজীপুরে ঝুট ব্যবসার দখল নিতে অস্ত্রের মহরা দেশীয় অস্ত্রসহ আটক ২ সখীপুরে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার কুমিল্লায় সন্ত্রাসী গ্রেফতার কমলনগরে নিখোঁজ বৃদ্ধার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার কালীগঞ্জে বেগবতি নদীর উপর বাঁশের সাকো চলাচলের একমাত্র ভরসা টম ক্রুজের সঙ্গে অভিনয়ের আগ্রহ প্রকাশ করলেন ব্র্যাড পিট

কালীগঞ্জে বেগবতি নদীর উপর বাঁশের সাকো চলাচলের একমাত্র ভরসা

  • আপলোড সময় : ১৭-০৬-২০২৫ ০৭:৪৭:৪৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৭-০৬-২০২৫ ০৭:৪৭:৪৩ অপরাহ্ন
কালীগঞ্জে বেগবতি নদীর উপর বাঁশের সাকো চলাচলের একমাত্র ভরসা
কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের তৈলকূপ গ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত বেগবতি নদী এই নদীর উপর একটি সেতুর অভাবে ভাঙাচোরা বাঁশের সাঁকো দিয়েই পারাপার হতে হয় ৪ ইউনিয়নের অন্তত ৫ গ্রামের মানুষের। কালীগঞ্জ শহরসহ অনান্য এলাকায় আসা যাওয়া করার জন্য এই বাঁশের সাঁকোই তাদের একমাত্র ভরসা। ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা বারবার প্রতিশ্রুতি দিলে পূরণ হয়নি তাদের চলাচলের সেতুর। নলডাঙ্গা রাজবাড়ির পাশে একটি চিকন সেতু নির্মাণ করা হলেও সেটি এখন একেবারেই চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। আবার সেই সেতু দিয়ে পার হতে গেলে অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়। এবং সেতুটি এতোই চিকন যে কোর রকম একটি ভ্যান গাড়ি মালমাল নিয়ে পার হওয়া দূষ্কর। তৈলকূপ গ্রামটি এমনই এক গ্রাম, যে গ্রামকে এক বেগবতি নদিই তিন দিক দিয়ে প্রবাহিত। শুধুমাত্র নলডাঙ্গার বাজারের পাশে উন্মুক্ত যে কারণে ভারী কোন ফসল বা অন্যান্য মালামাল পরিবহন করতে হলে অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয় জেলা ও উপজেলা শহরের হাট বাজারে। এজন্য চলাচলের জন্য প্রতি বছর চাঁদা তুলে নির্মাণ করা হয় বাঁশের সাঁকো। বছর পার হতে না হতেই বাঁশ পচে নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি বছরই সাঁকো নির্মাণে খরচ হয় লক্ষাধিক টাকা। সাঁকো পার হয়ে শহরে যেতে সময় ও অর্থ দুটোই ব্যয় হয়। ভারি যানবাহন চলাচল করতে না পারায় রোগী বহন করতে স্বজনদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। অনেক দূরের রাস্তা ঘুরে আসতে হয় শহরে। কৃষিপণ্য আনা নেওয়ায় কৃষকদের পড়তে হচ্ছে কষ্টে। সময়মতো কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে না পারায় বাজার মূল্য থেকে বঞ্চিত হন এই অঞ্চলের কৃষকেরা। পরিবহন খরচ বাড়ে দ্বিগুণ। চরম দূর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হাজার এলাকার মানুষ নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাকো। আবার এ সাকো নির্মাণের ৬ মাস যেতে না যেতেই নদীর পানির তোড়ে ভেঙে যায়। ডোঙ্গায় পারপার হতে গিয়ে অনেকেই নদীর পানিতে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। স্কুল, কলেজ, -মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তাদের বই পুস্তক নিয়ে নদীর পারাপার হতে গিয়ে অনেকেই নদীতে পড়ে আহত হয়। ফলে তাদের বই খাতা ভিজে যাওয়ায় স্কুল ও মাদ্রাসায় যাওয়া অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। এদিকে, অনেকেই ক্ষোভ নিয়ে জানান, স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান আহম্দে জানান, প্রতিদিন বেগবতি নদীর ওপর তৈরি এই দূর্বল বাঁশের সাঁকো দিয়ে আতংকিত ভাবে পারাপার হতে হয়। মনে সব সময় ভয় কাজ করে কখন যেন ভেঙে পড়ি পানিতে। তবুও উপায় না থাকায় এদিক দিয়েই যাতায়াত করি। তৈলকূপী গ্রামের আবুল কাশেম বলেন, বাঁশের সাঁকো ভেঙে মাঝে মধ্যেই মানুষ আহত হন। প্রায় ২৫ বছর আগে আমার শ্যালক অল্প কিছু কৃষি পন্য নিয়ে উপজেলা শহর কালীগঞ্জে যাওয়ার জন্য এই সাঁকো ভেঙে তিনি নিচে পড়ে যান এবং সাঁকো বাঁশে লেগে তার এক চোখে মারাত্বক আঘাত পায়। পরে বিভিন্ন ডাক্তার দেখিয়ে তার চোখ ভালো হয়নি। পরে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। ৪ বছর আগে আমার স্ত্রী অসূস্থজনিত কারণে ষ্ট্রোক করে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সাঁকোর উপর দিয়ে যাওয়ার সময় সাঁকো ভেঙে নিচে নদীর পানিতে পড়ে যায়। সেখান থেকে তুলে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। এই তো কিছুদিন আগেও সাইকেল নিয়ে পার হতে গিয়ে শমসের আলী নামের একজন সাইকেলসহ পানিতে পড়ে যায়। স্থানয়রা ছুটে গিয়ে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছি। নিহত আহত হলেও কারোরই টনক নড়েনি। এখানে একটি সেতু নির্মাণ দেখে যেতে চান তিনি। শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা স্বপ্ন দেখি একটি সেতু কিন্তু তা আজ বাস্তবায়ন হয়নি।। জানি না এ স্বপ্ন বাস্তবে কোনদিন রূপ নিবে কী-না। কারণ এখানে বছরের ৬ মাস পানি থাকে এবং বাকী ৬ মাস বাঁশের সাঁকোতে পারাপার হতে হয়। বছরের কার্তিক মাসে তৈরি করা হয় বাঁশের সাকো। বছরের পর বছর ধরে এরকম দূর্ভোগ ও ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে শত শত মানুষকে। সে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। সে প্রতিদিন ঐ ভাঙ্গাচোরা বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হয়ে নিয়ামতপুর ইউনিয়নের বারোপাখিয়া মসজিদের মোড়ে এসে তাকে ইজিবাইক, ভ্যান অথবা লাটা হাম্বারে চড়ে কালীগঞ্জ শহরে পৌছায়ে। এরপর বাসে চেপে তাকে যশোর যেতে হয়। এ নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা বর্ষার সময় তালের নৌকা (ডোঙ্গা) আর এখন একটি বাঁশের সাঁকো। তাও আবার বর্ষা আসলেই নদীর পানির স্রোতে ভেসে যাবে। ফলে বছরের ছয় মাস সাকো দিয়ে এবং বাকি ছয় মাস ডোঙ্গা দিয়ে এ নদী পারাপর হতে হয় তিন ইউনিয়নের কয়েক গ্রামের মানুষকে।
স্কুল শিক্ষক ফুলছার আলী বলেন, এই গ্রামের মানুষ প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে জেলা ও উপজেলা শহরে যায়, তারা সারা জীবনই এই দূর্ভোগ সঙ্গে নিয়ে তাদের চলতে হয়। তাছাড়া নদীর ওপারে বারোপাখিয়া মাদ্রাসা এবং নরেন্দ্রপুর ঘোষনগর মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীরা এই সাকো দিয়েই তাদের পারাপার হয়। তারাও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দূর্ভোগে পড়েছে। কোন কারণে যদি এখানে সেতু নির্মান করা সম্ভব না হয় তাহলে গোয়ালবাড়ি ঘাটে সেতু নির্মান করা হলেও আমাদের সমস্যা সমাধান হবে। আমাদের অনেক জনপ্রতিনিধি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ হলে দুপারের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। কালীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী সৈয়দ শাহরিয়ার আকাশ বলেন, তৈলকূপী গ্রাম এবং রাজবাড়ির পাশে যে পুরাতন সেতুটি আছে সেখানে আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখে নতুন করে একটি সেতু নির্মাণের জন্য টেন্ডার দিবো কিন্তু দু’পাড়ের বসতিরা জায়গা দিচ্ছে না এজন্য টেন্ডার করাতে পারছি না। সেতুটির ডিজাইন আছে ১৮ ফুট, সেখানে আমার জায়গা লাগবে ২৪ ফুট। কিন্তু নদীর ওপারে দুই পাকা বাড়ি আছে তারা জায়গা দিচ্ছেন না। এ কারণে সেখানে সেতুর নির্মাণ করার প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। আর আপনি নতুন যে জায়গার কথা বলছেন, সেটা আমার নলেজে নাই। যদি এলাকাবাসী জায়গা নির্ধারণ করে তাহলে তারা জেলা প্রকৌশলী অথবা আমার বরাবর আবেদন করলে আমি আমার উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা ব্যবস্থা করা যাবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য